Skip to content

দেহঘড়ি ও নোবেল ২০১৭ (Biological Clock)

চিকিৎসাশাস্ত্রে ২০১৭ তে নোবেল বিজয়ী নির্বাচনের ধরণ আগের কয়েকবারের চেয়ে কিছুটা আলাদা ছিলো। নোবেল কমিটির পছন্দের এই ভিন্নতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে গবেষণা শুধুমাত্র অভিনব প্রযুক্তির ব্যবহারে মানবকল্যাণ নয়, পাশাপাশি অনুসন্ধিৎসু মনের জ্ঞানচর্চাও বটে।

গবেষণা অজানাকে জানায়, অচেনাকে চেনায়। রোগ-ব্যধি বিষয়ক ব্যবহারিক গবেষণা ছাড়াও মানবদেহ নামক জটিল যন্ত্রটিকে জানার গুরুত্বকেই ফুটিয়ে তুলল এ নোবেল। চিকিৎসাবিদ্যার নোবেল পেয়েছেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী, জেফরি হল, মিশেল রসবাশ ও মিশেল ইয়াং। তাঁরা নোবেল পেয়েছেন দেহঘড়ির নেপথ্যে কাজ করে এমন একটি জিন আর প্রোটিন আবিষ্কারের জন্য। নোবেলটি পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করছে মৌলিক গবেষণার চর্চায়।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে অনুদান কমে আসছে মৌলিক গবেষণায়। এমনকি, তিন নোবেল বিজয়ীর একজন, জেফরী হল, প্রায় এক দশক আগে গবেষণা থেকে ইস্তফা দেন অনুদানের অভাবে!

যাই হোক, আসি দেহঘড়ি বা biological clock এর গল্পে। পৃথিবীর ঘুর্নণের সাথে জীবদেহ কিভাবে শারীরিক ক্রিয়াসমূহ সমন্বয় করে নেয়, সেই রহস্যেরই দুয়ার উন্মোচন করলেন নোবেল বিজয়ী তিন বিজ্ঞানী। ড্রসোফিলাকে (এক ধরনের মাছি) মডেল হিসেবে ব্যবহার করে তারা ব্যখ্যা করেছেন কিভাবে উদ্ভিদ কিংবা প্রাণি, সকলের শরীরই মানিয়ে নেয় ২৪ ঘন্টার দৈনিক চক্রের সাথে।

ড্রসোফিলায় একটি বিশেষ জিন তারা চিহ্নিত করেন, যা পিইআর নামের একটি প্রোটিনের তৈরির নির্দেশনা দেয়। এ প্রোটিনটি রাতে তৈরি ও জমা হয় এবং দিনে ভেঙ্গে যায়।  এই সিস্টেমটিকেই বলা হয় বায়োলজিক্যাল ক্লক বা দেহঘড়ি।

পিইআর ছাড়াও দেহঘড়ির সাথে যুক্ত আরো কিছু প্রোটিন তারা কোষে (জীবদেহ গঠনের একক) চিহ্নিত করেন, যাদের তৈরি ও ভেঙ্গে যাওয়া ২৪-ঘন্টার চক্রের সাথে সমন্বিত হয়। এভাবেই দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের হরমোনের লেভেল, ঘুম, তাপমাত্রা, আচরণ, এবং আমাদের শরীরে ঘটতে থাকা অসংখ্য রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া।

দেহঘড়ির দীর্ঘমেয়াদী অব্যবস্থাপনা বা অসামঞ্জস্য জন্ম দিতে পারে হরেক রকমের রোগ-ব্যাধির, যাদের মধ্যে রয়েছে ঘুমের সমস্যা, নানান মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি, হৃদযন্ত্রের জটিলতা, স্থুলতা, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এথেরোসক্লেরোসিস, ইনফ্ল্যামেশন, দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার অবনতিসহ আরো নানান অসুখ। দেহঘড়িকে গভীরভাবে বুঝতে পারলে সম্ভব হবে এসব রোগের চিকীৎসাপ্রণালী আরো সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা।

দেহঘড়ির মেকানিজম এর উপর সরাসরি কোন কাজ এখনো বাংলাদেশে হয়নি। কিন্তু দেহঘড়ির সাথে ঘুম বা পুষ্টির সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশীদের উপর সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কাজ হয়েছে। আগ্রহীরা পাবমেডে খুঁজে পাবেনঃ

  • হ্যাম্পেল ডি, ২০১৭ঃ দেহঘড়ির সাথে কিভাবে মায়ের দুধে ভিটামিনের লেভেল সমন্বিত হয়।
  • উদ্দিন এমএস, ২০১৫ঃ দেহঘড়ির অসামঞ্জস্যের সাথে কিভাবে স্ট্রোকের সূত্রপাত জড়িত।
  • হুসাইন এম, ১৯৯৬ঃ দেহঘড়ির সাথে কিভাবে মায়ের দুধে জিঙ্ক এর লেভেল সমন্বিত হয়।
  • খালেক এ, ১৯৯১ঃ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে shift-worker দের ঘুমের প্যাটার্ণের সাথে কর্মক্ষমতার সম্পর্ক।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *