জীবন নামের সফরে প্রত্যেকের জীবনের পাইলট তাকেই হতে হবে। ভুল হোক কিংবা ঠিক- সিদ্ধান্তগুলো নিজেকেই নিতে হবে। ভুল করব, ঠকব, কাঁদবো, শিখব। প্রত্যেকে আমরা নিজের জীবনের পাইলট আর কেউ কেউ হয়তো সাথে অন্য কারো জীবনের কো-পাইলট। কথাগুলো বলছি কারণ যখন আমার পরিচিতাদের দিকে তাকাই, দেখি ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে পৃথিবীব্যাপী এই নারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিজের জীবনের কন্ট্রোল বোর্ড ছেড়ে দিয়েছেন (বা দিতে বাধ্য হয়েছেন) এমন কারো হাতে যার কিনা তাকে সাপোর্ট করার কথা, নিয়ন্ত্রণ করার কথা নয়। আর ওদিকে, পুরুষদের কেউ কেউ দুই-দুইটি জীবনের পাইলট হয়ে অযথা বোঝায় বাঁকা হয়ে আছেন।
কারো জীবন বা দর্শন, এসব নিয়ে কথা বলার আমি কেউ নই, এগুলো তার নিতান্তই ব্যক্তিগত। মানছি। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যাটা দুশ্চিন্তার। এত বেশিসংখ্যক নারী নিজের সিদ্ধান্তে স্বশাসিত না হয়ে নির্ভরতার জীবন বেছে নিয়েছেন, তা কিভাবে সম্ভব!মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা নৈতিক দায়িত্ব। সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার, উন্নয়ন ও এগিয়ে আসাকে সমর্থন ও সম্পাদন যদি গর্বের বিষয় হয়, তবে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে এত দ্বিধা কিসের? সর্বনিম্ন রিসোর্সে সর্বোচ্চ সফলতা প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারীরা দেখিয়েছে বিশ্বজুড়ে।
তবে আটকাচ্ছে কেথায়? নারীরা পারেনা? নাকি ওদের ‘না পারাটা’ কেই বৈষম্যমূলকভাবে বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? একটা উদাহরণ দিচ্ছি। প্রথম নভোচারী, ইউরি গ্যাগারিন ছিলেন একজন পুরুষ। সেই সময় এবং পরে আরো বহু বছর পর্যন্ত বৈধভাবে একজন নারীর মহাকাশচারণের কোন সুযোগ ছিল না। এভাবে আরো হাজারো অর্জনের নক্ষত্র জ্বলেছে পুরুষের কপালে, নারী যেখানে অংশগ্রহণের সুযোগই পায়নি। এমনকি আজকের দিনেও এই চিত্র পুরোপুরি মুছে যায়নি। একজন মানুষের অবদান বলতে আমি বুঝি সহজ একটি ফর্মুলা=outcome ÷resource। আমার কি আছে আর তা থেকে আমি পৃথিবীকে কি দিলাম, সেটাই সমাজে আমার অবদান। এই সামর্থ্যে তো নারী পিছিয়ে নেই!
যার মাঝে সম্ভাবনা আছে, তাকে যেন বিকশিত হতে দিই। কোন বিশেষ ট্যাগ দিয়ে তাকে যেন নিরুৎসাহিত না করি। মানবধর্মের প্রসার হোক নিজের ভেতর দিয়ে, আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভেতর দিয়ে, ছড়িয়ে পরুক সর্বত্র।
