Skip to content

Quarantine Diet (কোয়ারেন্টিনে ডায়েট)

কারো কারো মনে কোয়ারেন্টিনের সকল দুশ্চিন্তা ছাপিয়ে উঠে আরেকটি বিশেষ দুশ্চিন্তা। এই নিয়ে চোখে পরছে কত্ত কত্ত স্যাটোয়ার ভরা meme। ওজন বেড়ে যাচ্ছে, শরীরের ফর্ম হারানোর দুশ্চিন্তায় তখন হাতের অঢেল সময় ঢেলে বানিয়ে ফেলি আরো দুটি পদ, চালান করে দেই বিষণ্ণ পেটে।


‘সবার জন্য অন্তঃপুর’, এই জীবন এখন আমাদের ‘নতুন ‘স্বাভাবিক’। তবে একটু সচেতনভাবে চেষ্টা এভাবেও সুস্থ ও ফর্মে থাকা সম্ভব। সুস্থ্য থাকতে সবাই দুটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেয়ঃ ১) কি খাচ্ছি,  কতটুকু খাচ্ছি, ২. ব্যয়াম। কিন্তু তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি আমরা সবাই ভুলে যাই যেটা করা বরং খাবারের পরিমান নিয়ন্ত্রন ও ব্যয়ামের চেয়ে সহজ। 

এই তিন নম্বর ব্যাপারটি হলো কখন খাচ্ছি, খাবারের রুটিন। আর সব অভ্যাস তৈরি করার মতই একটু লেগে থাকলে সহজেই আপনি নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে পরবেন। শরীর (পড়ুন ‘ভুড়ি’) নিয়ন্ত্রণে থাকবে,সাথে প্রচলিত সব অসুখ বিসুখও।
সঠিক সময়ে খাওয়ার নতুন অভ্যাসটা গড়তে নিজেকে উৎসাহিত করতে হলে জানা প্রয়োজন এই সময়মতো খাদ্যগ্রহণ কিভাবে আমাদের ভাল থাকতে সাহায্য করে। আর তার জন্য ইনসুলিন বিষয়ে হালকা একটু জানা থাকলে ভালো। ইনসুলিন নিজেও একটি প্রোটিন।


সুস্থ্যতার একটি সাধারণ চিত্র হলো রক্তে চিনি/শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখা। এজন্য সবাই ওজন কমাতে প্রথমেই খাবারে শর্করা কমান। খাবার পর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।  ইনসুলিনের কাজ রক্ত থেকে শর্করা কোষের ভেতরে ঢোকানো। এতে দুটি কাজ হয়:

১. কোষের ভেতরের যন্ত্রপাতি শর্করা থেকে শক্তি তৈরী করে, যে শক্তি খরচ করে আমরা সব কাজ করি।

২. রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে আসে।


নিয়মিত খুব বেশি শর্করা খেতে থাকলে ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ তৈরী হয়। এর সহজ অর্থ হলো, ইনসুলিন রক্ত থেকে খুব বেশি শর্করা কোষে ঢোকাতে পারে না। এই লেখার যে কয়েকটি কথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এখন জানবেন তার একটি। ‘২৪ ঘন্টায় ১ দিন’ হিসেবে শুধু আমরা আমাদের কাজের প্রাত্যহিক রুটিন করি তাই নয়, আমাদের শরীরও সূর্যের সাথে কোলাবরেশনে গিয়ে এই ২৪ ঘন্টার হিসেবে রুটিন বা ছন্দ তৈরী করে কাজ করে। এই ছন্দের নাম circadian rhythm। এই rhythm শরীর কখন কি করবে তা ঠিক করে দেয়।


এই যেমন রাতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। শরীরে মেলাটোনিনের পরিমাণ বেড়ে আমাদের ঘুমঘুম অনুভূতি দেয় (এপ্রিল ২০ এর পোস্টে শিশুর উপর স্ক্রিনের প্রভাব লেখায় ইনসুলিন ও মেলাটোনিন নিয়ে আরো বলেছি)। আমাদের শারীরবৃত্তীয় যত কাজের সময় নিয়েই circadian rhythm এর নির্দেশনা আছে। আমরা চাইলে এসব নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে পারি। সারারাত না ঘুমালে বা সারাদিন না খেয়ে থাকলে শরীর সাথে সাথে আপত্তি করবে না। কিন্তু এসব অস্বাস্থ্যকর কাজ circadian rhythm কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এতে শরীরের উপর মারাত্নক সব প্রভাব পরে, যার মধ্যে রয়েছে স্থুলতা, হৃদযন্ত্রের অসুখ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

 
বেলা গড়ানোর সাথে সাথে ইনসুলিনের শর্করা কোষে ঢোকানোর ক্ষমতা কমতে থাকে। অর্থ্যাৎ দিনের শেষের দিকে শরীর শর্করা কম সহ্য করতে পারে। তাই সকালের তুলনায় রাতের খাবারের পর শর্করা কোষে ঢুকতে না পেরে রক্তেই থেকে যায় বেশ লম্বা সময় ধরে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়। কাজেই, যাদের অনেক  শর্করা খেয়ে অভ্যাস, তারা সকাল বা দুপুরের তুলনায় রাতের খাবারে শর্করা কম রাখুন।


সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো আর রাতে ভিখিরীর মতো। প্রবাদটা সবাই শুনেছি, বিজ্ঞান ও একে সমর্থন করে। এটাই সুস্থ খাদ্যভাসের মূলমন্ত্র। আপনার খাবারের সময়টাকে দিনের আলোর সাথে মিলিয়ে নিন। সূর্য ডোবার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত করুন উপবাস, ক্যলোরিযুক্ত খাবারে কারিফিউ। আমাদের পূর্বপুরুষরা, এমনকি এখনও বাংলার গ্রামগুলোতে অন্ধকার নামতেই রাতের খাবার হয়ে যায়। ওরা যে শারীরিকভাবে অনেক সুস্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খাবারের সময় একমাত্র কারণ না হলেও উল্লেখযোগ্য একটি। এখনও গ্রাম এলাকায় লোকে সকালে গামলাভর্তি ভাত খেয়ে ঘর থেকে বের হন। অথচ আমরা ক্যালরি বা কাপ হিসেবে ভাত খেয়েও ফর্মে থাকতে পারি না! 


সুস্থতার বেলায় আমাদের প্রধান খাদ্য ভাতের সাথেই আমাদের যত শত্রুতা! তাই ওজন কমাবো ভাবলেই প্রথমে ভাত অনেক কমিয়ে দেই বা ভাতের বদলে অন্য কিছু খেতে শুরু করি।  পশ্চিমারা ভাত কম খায়, তাই সুস্থ থাকতে চাইলে আমাদেরও যেন ভাত ছেড়ে দিতে হবে! আমরা ভুলে যাই ভাতের সাথে আমাদের আজন্ম সখ্য। ভুলে যাই আমরা লাঞ্চ বা ডিনার করি না, আমাদের খাওয়া মানেই ভাত খাওয়া। চাল আমাদের দেশের প্রধান একটি শস্য, সহজলভ্য। তাই হুট করে ভাত ছাড়ার উদ্যোগটা টেকসই হয় না, সপ্তাহ বা মাস বাদে আমরা ভাতেই পাই আশ্রয়।

নতুনত্ব মানেই ভালো নয়, অন্ধের মতো অনুকরণ নয়। ভাতের গুণের কথা বলতে গেলে শত শত আর্টিকেল চলে আসবে। অথচ আমরা আজন্ম অভ্যস্ত খাবার ভাতকে মেন্যু থেকে বাদ দিতে গিয়ে stress eating করে পরিমাণে আরো বেশিই খাই। দুঃখের ব্যাপার, সেই ভাতও দিনকে দিন processed হচ্ছে, আরো সাদা আর মেশিনে ভেঙ্গে চিকণ হচ্ছে, এতে ভাতের ক্ষতিকর প্রভাবই বাড়ছে। ভাতের ব্যাপারে এখানকার সারকথা হল, শুরুতেই খাবারে ভাত অনেক কমানোর মত কঠিন কাজটা না করে সহজ কাজগুলো করুন। পরিমাণ সামান্য কমান, চালটা বদলে ফেলুন।


ফিরে আসছি রুটিনের কথায়। Rogan Crapain Spiker বুদ্ধি দেন, সকালে ডিনার করুন। অর্থাৎ ডিনারে যে পরিমান ও যেসব খাবার খেতেন, সেটা সকালে খান। কিন্তু আমাদের সকালে গলা দিয়ে পানিও নামতে চায় না। নামবে, অভ্যাসে সব হবে। সকালে দিনের সবচেয়ে বড় meal টা গ্রহণ করুন। মাছ-মাংস-রুটি-ভাত-ডাল-সবজি-ফল সবই থাকতে পারে। সারাদিনের মোট খাবারের অর্ধেক অংশই সকালে খেয়ে নিন। সকাল মানেই ব্রেড-সিরিয়াল বা শুধু চা-বিস্কুট, এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন। অভ্যেস করুন ধীরে ধীরে। এখন আপনি সকালে যা খেয়ে অভ্যস্ত, তার সাথে দু-একটা করে আইটেম যুক্ত করতে থাকুন। এখন যদি আপনার সাধারন নাস্তা হয়ে থাকে ব্রেড-টোস্ট, তবে সকালে একটি ফল যোগ করুন। আস্তে আস্তে যোগ করতে পারেন ডিম-দুধ-দই-সালাদ-সবজি-মাছ ইত্যাদি। পরিমাণ কম রেখে খাবারের সংখ্যা বাড়ান। আস্তে আস্তে অভ্যাস হবে এবং সারাদিনের কাজে অনেক ভালো বোধ করবেন।

 
যেকোনো অভ্যাস তৈরীর প্রথম মাসটিই কঠিন। প্রথমে কিছুদিন খেয়াল করে দেখুন আপনার খাদ্যভ্যাস, কি খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন। কতখানি বাইরে খাবার খাচ্ছেন, মিষ্টি-ভাজাপোড়া খাচ্ছেন। তারপর শরীর ও মনের উপর চাপ না ফেলে একটু একটু করে পরিবর্তন আনুন। রাতের খাবারের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি খাবারের সময়টাও এগিয়ে নিয়ে আসুন। প্রথমে ১-২ সপ্তাহ অন্তত আধাঘন্টা আগে খেয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। এভাবে সময়টা একটু একটু করে কমিয়ে আটটার আশেপাশে নিয়ে আসুন কয়েক সপ্তাহের মাঝে। রাতে দেরীতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে পরে দুধ, বাদাম বা ছোলা জাতীয় কিছু খেয়ে নিন।


এসব নিয়ম কানুন মাঝে মাঝে এলোমেলো হয়ে যেতেই পারে। সামগ্রিকভাবে অভ্যাসটা তৈরী হচ্ছে কি না, সেটাই বড় কথা। এক মাস লেগে থাকতে পারলে দ্বিতীয় মাস থেকে সব অনেক সহজ হয়ে আসবে। শরীরে ভালো বোধ করবেন। নিজেকে ও পরিবারকে ঘিরে আরো নানা উদ্যোগ নিতে উৎসাহ পাবেন।

প্রথম প্রকাশঃ ,২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *