Skip to content

শিশুর স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করতে স্ক্রিন টাইমের প্রভাব / Screen Time Disrupts Stress Regulation in Children

আজকের পর্বে শুধু টিভি নিয়ে কথা বলব না, সাথে থাকবে স্ক্রিনটাইম। একজন শিশু কতক্ষণ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটাচ্ছে, সেটাকে আমি বলছি স্ক্রিন টাইম। স্ক্রিন টাইমের মাঝে অন্তর্ভুক্ত থাকবে টেলিভিশন দেখার সময়, শিশুটি যে সময়টুকু মোবাইল ডিভাইস নিয়ে খেলছে এবং অন্য যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রাখছে ইত্যাদি।

স্ক্রিনটাইম শিশুর দেহে করটিসল ও ইন্সুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে শিশুকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকিতে ফেলে। করটিসল আমাদেরকে বিপদের মুখে শরীরের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার (fight or flight response) জন্য প্রস্তুত করে। আর ইনসুলিন শরীরে শক্তি তৈরি ও সঞ্চয়ে সাহায্য করে।

মেলাটোনিন হরমোনের সাথে আপনারা ইতোমধ্যে পরিচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনটি স্ক্রিনটাইমের সাথে সংশ্লিষ্ট, তা হল করটিসল (cortisol)। করটিসলকে শিশুর দেহে স্ট্রেসের মার্কার বলে ধরা হয়। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে বা নিচে করটিসলের উপস্থিতি, দুটোই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিক অবস্থায়, রাতে করটিসলের মাত্রা দেহে কম থাকে, ভোরের দিকে এ মাত্রা বাড়তে থাকে এবং ঘুম ভাঙ্গার পর করটিসলের মাত্রা বেশ অনেকটা বেড়ে যায়।

স্কুল পড়ূয়া শিশুরা, যারা দিনে ৩ ঘন্টা স্ক্রিনে কাটায়, তাদের করটিসলের মাত্রা কিভাবে পরিবর্তিত হয়? ঘুম থেকে জাগার ১ ঘন্টা পরেও এই শিশুদের শরীরে করটিসলের মাত্রা যতটুকু বাড়া প্রয়োজন ততটুকু বাড়ে না। অন্যদিকে, স্ক্রিনে ৩ ঘন্টার কম সময় কাটানো বা স্ক্রিনে একেবারেই সময় না কাটানো একই বয়সের শিশুদের দেহে করটিসলের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। ১০মাস বয়সী শিশুদের দেহে করটিসলের মাত্রা পরীক্ষা করেছে এমন একটি ২০১৩ সালের গবেষণা দিয়ে করটিসলের গল্প শেষ করছি। যে শিশুরা প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট ডিভিডি দেখেছে, তাদের শরীরে করটিসলের মাত্রা ব্লক দিয়ে খেলা শিশুদের চেয়ে অনেক কম ছিল। বুঝতেই পারছেন, আপনার শিশু যে বয়সেরই হোক না কেন, স্ক্রিনে কাটানো অতিরিক্ত সময়ের জন্য তাকে ভবিষ্যৎ জীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরতে হতে পারে।

আমাদের শরীরে করটিসলের কাজগুলো জানলেই বুঝতে পারবেন, করটিসলের সঠিক মাত্রা আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ন। তবে সহজভাবে, ‘করটিসল গুরুত্বপূর্ন’ এটা মনে রাখাই যথেষ্ট, কিভাবে করটিসল কাজ করে সেটা আপনার বোঝার খাতিরে বলছি। করটিসল রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ, ও খাদ্যের মেটাবলিজম/বিপাককে নিয়ন্ত্রণ করে। আরো দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছেঃ ১) শরীরে inflammation/প্রদাহ (এলার্জি বা ইনফেকশন হলে তৈরি হয়) কমানো ও ২) আমাদের স্মৃতিকে সূত্রবদ্ধ করা।

চলুন দেখি, তবে শিশু যখন কোন স্ট্রেসের শিকার হয়, করটিসলের সঠিক মাত্রা তাকে কিভাবে সাহায্য করে। আমরা যখন কোন স্ট্রেসের শিকার হয়, তখন করটিসল শরীরে বেশি নিঃসৃত হয়। করটিসল তৎক্ষণাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত শক্তি তৈরি করতে। পরোক্ষভাবে করটিসল হৃদস্পন্দন বাড়ায় যাতে আরো বেশি রক্ত হৃদপিণ্ড পাম্প করতে পারে। অর্থাৎ করটিসল আমাদেরকে বিপদের মুখে শরীরের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার (fight or flight response) জন্য প্রস্তুত করে।

ইনসুলিন নামের হরমোনের গল্প বলে এই পয়েন্টটি শেষ করছি। ইনসুলিন নিয়ে শরীরে তৈরি হওয়া নানা সমস্যার দুটি হচ্ছেঃ ১) রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যাওয়া ও ২) রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক থাকা স্বত্বেও ইনসুলিনকে আমাদের দেহ গ্রহণ করে না (অন্য কথায়, ইনসুলিনের প্রতি আমাদের sensitivity কমে যায়)। ডায়াবেটিস রোগির আধিক্যের কারণে, ইনসুলিনের কাজ সবাই কম-বেশি জানি, তাই এ নিয়ে আর বিস্তারিত লিখছি না, শুধু ৮-১৯ বছর বয়সীদের উপর করা কিছু গবেষনা থেকে ২ টি তথ্য তুলে ধরছিঃ ১) দৈনিক মাত্র ২ ঘণ্টার স্ক্রিন টাইমও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে, ২) প্রতি ১ ঘন্টা স্ক্রিন টাইম বাড়ার সাথে ইনসুলিনের প্রতি sensitivity কমতে পারে ৫%!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *