Skip to content

Keto Diet, For or Against? কিটো ডায়েট, পক্ষে? বিপক্ষে?

কিটো ডায়েটের সাথে অনেকেই  পরিচিত ওজন কমাতে এর কার্যকর ব্যবহারের জন্য। আসলে চিকিৎসাবিদ্যায় কিটো ডায়েটের ব্যবহার নতুন নয়। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আলঝেইমার’স ইত্যাদি অসুখের চিকিৎসায় অতীতে কিটো ডায়েট ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু দ্রুত ওজন কমানোর উপায় হিসেবে  কিটো ডায়েটের জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক।

  • কিটো ডায়েট কী?

এটা প্রায় সবাই জানেন। এই ডায়েটের ৭০-৮০ ভাগই থাকবে চর্বি জাতীয় খাবার, ১০-২০ ভাগ প্রোটিন/আমিষ, আর মাত্র ৫-১০ ভাগ শর্করা/কার্বোহাইড্রেট। ৫-১০ ভাগ শর্করা ঠিক কতটুকু? একটি আনুমানিক ধারণা হলো, মাঝারি আকৃতির একটি বনরুটিতেই আপনি এই পরিমাণ শর্করা পেয়ে যাবেন।

  • কীভাবে কাজ করে?
  1. শর্করা আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎস। আমরা যে শর্করা খাই, তা ভেঙ্গে তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তির বেশির ভাগই খরচ হয় মস্তিষ্কের কাজে। আর আমাদের বেঁচে থাকার জন্য মস্তিষ্কের এই শক্তিটুকু চাইই চাই। যখন আমরা শর্করা খাওয়া কমিয়ে বা বন্ধ করে দিই, তখন শক্তির অভাব ইনসুলিনকে সিগনাল দেয় রক্তে বেশি করে জমা হওয়ার জন্য। আর ইনসুলিনের সাহায্য নিয়ে আমাদের দেহের ‘সঞ্চিত চর্বি’ ভেঙ্গে তৈরি হয় কিটোন, তারপর কিটোন থেকে শক্তি। কিটো ডায়েটে শর্করা থাকে খুব কম। আর শর্করার অভাবে শরীরের প্রয়োজনীয় মূল শক্তি কিটোন থেকে তৈরি হয় বলেই এই ডায়েটের নাম কিটো ডায়েট। এই ধরনের ‘সঞ্চিত চর্বি’ সাধারণত আমাদের দেহে একটু একটু করে জমা হয় প্রতিদিনের গ্রহণ করা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার/ক্যালরি থেকে, যাতে করে শরীরের যখন শক্তির অভাব হয় তখন এই চর্বিকে ভেঙ্গে শরীর জরুরী ভিত্তিতে শক্তি তৈরি করতে পারে।
  2. কিটো ডায়েটের মূল মেকানিজম ছাড়াও আরো কিছু পরোক্ষ কারণ আছে এর কার্যকরীতার পেছনে। সুষম ডায়েটের সব উপাদান না থাকায়,  কিটো ডায়েট খেলে শরীর গ্রহণ করা খাবার থেকে শক্তি তৈরির কাজ যথাযথভাবে করতে পারে না। কাজেই অতিরিক্ত চর্বি খেলেও তা থেকে কার্যকরভাবে শক্তি তৈরি হবে না।
  3. আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার আমাদের পেট ভর্তি থাকার একরকম অনুভূতি তৈরি করে, এতে আমাদের খাবারের পরিমাণ কমে যায়। অর্থাৎ আপনি কম শক্তি গ্রহণ করছেন, একই সাথে আপনার শরীরের চর্বি ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে শক্তি। দো-ধারী তলোয়ার?
  4. আমাদের দেহে হাড়ের তৈরি কঙ্কালের উপর মাংসের যে আবরণ, তার বড়  অংশকে বলা হয় মাসল, যা প্রোটিন দিয়ে তৈরি এবং সুস্থ গড়নের জন্য খুব দরকার। শরীরে সঞ্চিত চর্বিও যখন ভেঙ্গে ভেঙ্গে শেষ হয়ে যায়, তখন আমাদের মাসল এর প্রোটিন ভেঙ্গে শক্তি তৈরি হয় আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে। কিটো ডায়েটে কিছুটা প্রোটিন ও তার চেয়ে চর্বি অনেক বেশি থাকায়, খুব বেশি মাসল প্রোটিন হারানোর ভয় থাকে না।
  • কিটো ডায়েট আসলেই কি ওজন কমায়?  

নিঃসন্দেহে। কয়েক সপ্তাহের মাঝে আপনি কয়েক কেজি পর্যন্ত ওজন হারাবেন। সাথে উপকার মিললেও মিলতে পারে ইনসুলিন (ডায়াবেটিস) ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায়।

  • কিটো ডায়েট কি ঝুঁকিহীনভাবে ওজন কমায়?
  1. একেবারেই না। ওজন কমানোর জন্য ‘দ্য পারফেক্ট ডায়েট’ বলে কিছু নেই, কিটো ডায়েটেরও রয়েছে নানা ঝুঁকি। প্রথমত, এ ধরনের ডায়েট গ্রহণের আগে প্রয়োজন যে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। কিছু রোগের ক্ষেত্রে কিটো ডায়েট গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আবার আপনি হয়ত সুস্থ আছেন বলেই আপনি জানেন, কিন্তু জেনেটিক বা যে কোন কারনেই হোক, আপনি ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন, যা আপনার অজানা। সেক্ষেত্রে কিটো ডায়েট গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। আবার সব বয়সের, সব লিঙ্গের, সব গোষ্ঠির মেটাবলিজম, অর্থাৎ শরীরে শক্তির প্রয়োজনীয়তা, চর্বি ভেঙ্গে শক্তি তৈরির ক্ষমতা ইত্যাদি এক নয়। প্রত্যেকের জন্য দরকার হবে ভিন্ন ভিন্ন  কিটো ডায়েট। সেটি একজন পুষ্টিবিদই শুধু আপনার জন্য তৈরি করতে পারে, সেটা শরীরের নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর, এবং সাথে আপনার ও পূর্ব-পুরুষের রোগের ইতিহাস, আপনার জীবন যাত্রার ধরণ ইতাদি জানার পর।
  2. কিটো ডায়েট নিয়ে এখন পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে তার সবই মাত্র কয়েক মাসের উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। অর্থাৎ কিটো ডায়েট ওজন কমায় সত্যি, কিন্তু শরীরে কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে কি না, সেটা আমাদের অজানা। যদিও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খুঁজতে অনেক গবেষণা হচ্ছে। আমাদের হরমোনে ব্যপক পরিবর্তন আনতে পারে এই ডায়েট। এ অবস্থায়, এই ডায়েট দিয়ে নিজেই নিজের ওজন কমানোর চেষ্টা করলে, ওজনকে বিদায় দেবেন ঠিক, তবে সাথে নানান সমস্যাকেও নিমন্ত্রণ করা হয়ে যেতে পারে।
  • আমার ওজন অনেক বেড়ে গেলে আমি কি কিটো ডায়েট গ্রহণ করবো?

শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। পরিমাণমত সব্জি-ফল-প্রোটিন-অপ্রক্রিয়াজাত খাবার, সাথে ব্যয়াম ও ভালো ঘুম, নিজে নিজে ওজন কমাতে চাইলে এটাই পরীক্ষিত ও নিরাপদ উপায়।

  • কেন প্রথম আলোর মত প্রথম সারির পত্রিকায় কিংবা সেলিব্রিটি ব্লগার/ইউটিউবার এর ভিডিও দেখেই কিটো ডায়েট গ্রহণ করবো না?

দক্ষিণ ইউরোপের কয়েকটি দেশের জনগণ থেকে স্টাডি গ্রুপ নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেয়েছে, তারা বরং হৃদরোগে ভুগেছেন কম। এধরনের গবেষণাগুলোর বৈজ্ঞানিক অংশ ভালোভাবে না জেনেই এবং শুধু হেডলাইন দেখেই আমরা একটি সহজ উপসংহারে চলে আসি। দুঃখজনকভাবে এই কাজটি উচ্চশিক্ষিত লোকরাও করে থাকেন। আর ইচ্ছেমত মাংস খেয়েও শরীর থাকবে ঝরঝরে, এরকম আশাবাদী খবর আমাদের খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। এইসব আশা দেয়া অর্ধসত্য খবর আমরা ছড়িয়ে দিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মুল খবর তারপর আর কেউ খোঁজে, সেইসব অর্ধসত্য খবর থেকে তৈরি হয় আরো খবর, ভিডিও ও নানা কন্টেন্ট। কিটো ডায়েট, কিংবা সাত দিনে রঙ ফর্সা করার তরিকার উপর তাই আপনি পেয়ে যাবেন শত শত লেখা/ভিডিও।যা হোক,  দক্ষিণ ইউরোপের এই গবেষনাগুলোতে যাদের স্টাডি করা হয়েছে, তাদের দৈনন্দিন ডায়েট আমাদের থেকে অনেক আলাদা। দক্ষিণ ইউরোপীয়রা প্রচুর সবজি-ফল খায়, সাথে থাকে সামুদ্রিক মাছ-চীজ থেকে পাওয়া নানা প্রোটিন। খাবার ওদের জন্য কেবলই শক্তি তৈরি বা পেট ভরার বিষয় নয়, বরং খাবার টেবিলেই ওদের হয় লম্বা সময় ধরে ভাব বিনিময়, জমে উঠে আড্ডা। গল্পের সাথে সাথে, বেশির ভাগ খাবারই ওরা গ্রহণ করতে থাকে কম পরিমাণে। টেবিলে চর্বি জাতীয় কয়েকটি খাবার থাকলেও তারা প্রতিটিই  গ্রহণ করে পরিমিত পরিমাণে। সাথে আছে ওদের নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যেস। তাই, পৃথিবীর কিটো ডায়েটের সাফল্য নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা থাকলেও, কিটো ডায়েট নিয়ে বিজ্ঞানী মহলেই আছে নানা বিতর্ক এবং সবাই একমত আরো গবেষনার প্রয়োজনীয়তার ব্যপারে।

পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *