Skip to content

মা ও শিশুর স্বাস্থ্য

পর্ব ১ঃ

নেদারল্যান্ডসে দুর্ভিক্ষঃ ১৯৪৪

১৯৪৪ এর সেপ্টেম্বরে মিত্রবাহিনী জার্মানি, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ এবং বেলজিয়ামে জয় করে নেদারল্যান্ডসে প্রবেশ করেছিল। নেদারল্যান্ডসের উত্তরে যখন ওরা আর জার্মানদের হটাতে পারছিল না তখন ডাচ সরকার মিত্রদের আক্রমণকে সমর্থন করতে ডাচ রেলপথের ধর্মঘটের ডাক দেয়। প্রতিশোধ হিসাবে প্রতিপক্ষ জার্মানরা সমস্ত খাদ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করে দেয়। নভেম্বরের গোড়ার দিকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ততদিনে বেশিরভাগ জলপথ দিয়ে তীব্র শীতের কারণে নেদারল্যান্ডসের পূর্ব থেকে পশ্চিমে খাবার পরিবহন অসম্ভব হয়ে পরেছিল।

নভেম্বরের শেষে পশ্চিম নেদারল্যান্ডসে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার জন্য সরকারী রেশন দু’হজার থেকে প্রথমে এক হাজার ক্যালোরির নীচে ও পরে ৪০০ ক্যালোরিতে নেমে আসে (Dutch Hunger Winter)। ১৯৪৫ সালের মে মাসে নেদারল্যান্ডস স্বাধীন হওয়ার পরে খাদ্য পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়। দুর্ভিক্ষের সময় যে নারীরা গর্ভধারণ করেন এবং শিশুদের জন্ম দেন, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্লিমেন্ট স্মিথ তাদের স্বাস্থ্যের উপর দুর্ভিক্ষের প্রভাব পরিক্ষা করেন। দুর্ভিক্ষকালে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চারা অনেকেই জন্মের সময় প্রায় 200 গ্রাম হালকা হয়। এটা অনেকটা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু অবাক হয়ে বিজ্ঞানিরা লক্ষ্য করলো, যেসব শিশুরা স্বাভাবিক ওজন ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে জন্মেছিল, পরবর্তিতে তাদের মাঝেও দেখা যায় বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। এসব রোগের মাঝে ছিল নানা রকম হৃদরোগ, মানসিক রোগ (schizophrenia, depression, anti-social personality), স্থূলতা, রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ, ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই নেদারল্যান্ডের অন্যান্য অঞ্চলে, যেখানে খাদ্যের অপ্রতুলতা ছিলো না, ওইসব অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের মাঝে রোগের এমন প্রকোপ দেখা যায়নি। অসুখ বিসুখ সবচেয়ে বেশি ছিলো গর্ভের প্রথম তিনমাসে যে মায়েরা দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছিল, তাদের সন্তানদের মাঝে ।

পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় এক বিলিওন লোক পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়। বলতে বাধা নেই, চারপাশে অসুখ বিসুখ যা দেখি, তার বেশির ভাগেরই শুরুটা হয় মাতৃগর্ভে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *