আজকের পর্বে শুধু টিভি নিয়ে কথা বলব না, সাথে থাকবে স্ক্রিনটাইম। একজন শিশু কতক্ষণ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটাচ্ছে, সেটাকে আমি বলছি স্ক্রিন টাইম। স্ক্রিন টাইমের মাঝে অন্তর্ভুক্ত থাকবে টেলিভিশন দেখার সময়, শিশুটি যে সময়টুকু মোবাইল ডিভাইস নিয়ে খেলছে এবং অন্য যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রাখছে ইত্যাদি।
২ ঘন্টার স্ক্রিন টাইম ও তার দরুন সেডেনটারি অভ্যাস ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা যে কোন বয়সের শিশুর মাঝেই উচ্চ রক্তচাপের বীজ বপন করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের শিশু ও কিশোরদের উপর গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। এসব গবেষণায় স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানো শিশুদের কয়েক বছর ধরে ফলো-আপ করা হয়েছিল এবং উচ্চ রক্তচাপের ধরা পরেছিল ওই ফলো-আপের সময়ে। সুখবর হচ্ছে, ২০১২ সালে করা Gopinath B. ও তার সহকর্মীদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিত্য এক ঘণ্টা পড়ার অভ্যাস (স্ক্রিনে পড়া নয়) রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে!
স্ক্রিন টাইম ও তার দরুন সেডেনটারি অভ্যাসের কারনে শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোরদের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের স্ক্রিন টাইম ৩ ঘন্টার বেশি ছিল, তাদের রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশ কমে গিয়েছিল। একই বয়সের কিশোরদের উপর করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাদের বাকি সব শারীরিক পরিশ্রম স্বাভাবিক ছিল এবং ভিডিও গেইমই ছিল একমাত্র সেডেনটারি অভ্যাসের উৎস, তাদের রক্তেও ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশ কমে গিয়েছিল।
সহজ কথায় বলা যায়, শিশুর বর্তমানের স্ক্রিন টাইমের আধিক্যই হতে পারে তার ভবিষ্যতের হৃদরোগের কারণ।
দৃষ্টিশক্তি, পেশী ও কঙ্কালন্ত্রে স্ক্রিন টাইমের প্রভাব
দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের চোখ ঝলসানো তীব্র আলো থেকে সৃষ্টি হতে পারে চোখের ক্লান্তি ও অস্বস্তি, অস্পষ্ট দৃষ্টি, চোখের শুষ্কতা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের দৃষ্টিক্ষীণতা (myopia) দ্বিগুন বেড়েছে। যেহেতু শিশুর স্ক্রিন টাইম বাড়ার সাথে সাথে ঘরের বাইরে খেলাধুলার সময় কমতে থাকে, দুটো মিলেই শিশুর চোখের ক্ষতি ত্বরান্বিত হয়। বাইরের স্বাভাবিক আলোতে সময় কাটালে শিশুর চোখের রেটিনা থেকে ডোপামিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা দৃষ্টিক্ষীণতা (myopia) রোধ করে। শিশুর দৃষ্টিক্ষীণতা (myopia) ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার একটি মূল কারণ হতে পারে দীর্ঘক্ষণ ভেডিও গেইম খেলা। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ভিডিও গেইম খেলা ৩-১০ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে টনটনে ব্যাথা, ইত্যাদির প্রবণতা দেখা গেছে।
বিশেষ করে যে শিশুরাইলেকট্রনিক ডিভাইস হাতে নিয়ে দেখে বা খেলে, তাদের posture সহ মাংসপেশী ও হাড়ের সমস্যা বাড়ে। এভাবে দীর্ঘ সময় হাতে একই ভঙ্গিতে স্ক্রীন ধরে রাখা ও খেলার জন্য কবজি, ঘাড়, কাঁধ ইত্যাদিতে ব্যাথার উৎপত্তি হয়।
