একজন শিশু কতক্ষণ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটাচ্ছে, সেটাকে আমি বলছি স্ক্রিন টাইম। স্ক্রিন টাইমের মাঝে অন্তর্ভুক্ত থাকবে টেলিভিশন দেখার সময়, শিশুটি যে সময়টুকু মোবাইল ডিভাইস নিয়ে খেলছে এবং অন্য যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রাখছে ইত্যাদি।
শিশুর স্বাস্থ্যে স্ক্রিন টাইমের প্রভাব শুধুমাত্র সময়ের দৈর্ঘ্যের উপরেই নির্ভর করে না। পাশাপাশি স্ক্রিনে কি ধরনের কনটেন্ট শিশুটি দেখছে, অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পরে কতক্ষন শিশু স্ক্রিন ব্যবহার করছে, কি ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে এবং কতটি ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস একজন শিশু ব্যবহার করছে, এই সবকিছু মিলেই শিশুর স্বাস্থ্যের উপর স্ক্রীনের প্রভাব আলোচনা করব।
২০০৯-২০১২ সালে করা ২-৪ বছর বয়সী বাচ্চাদের উপর করা একটি সার্ভে নিশ্চিত করেছে যে দৈনিক ২ ঘণ্টার চেয়ে বেশি টিভি দেখা শিশুদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আরেকটি সার্ভে বলে, ৯-১০ বছর বয়সী শিশুদের যারা ৩ ঘণ্টা টিভি দেখে, তাদের মাঝে স্থূলটা বেশি। এ ধরনের ১৪ টি গবেষণার ফলাফল একসাথে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, শিশুর টিভি টাইম বাড়ার সাথে সাথে স্থূলতা বাড়ে সমান অনুপাতে। প্রতি এক ঘন্টা বাড়তি টিভি দেখার জন্য শিশুর ওজন বাড়তে পারে ১৩%।
ইউরোপের ৬-৯ বছর বয়সী ১০,০০০ শিশুর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ঘন্টা স্ক্রীন টাইম বাড়ার সাথে সাথে শিশুরমাঝে জাঙ্ক খাবার (উচ্চ শর্করা-চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড) খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং তাজা ফল-সবজি খাওয়ার আগ্রহ কমে। শিশুর খাদ্যাভাসের উপর স্ক্রিনটাইমের প্রভাব অনুসন্ধান করেছে এমন ২২ টি গবেষণার উপাত্ত একসাথে বিশ্লেষণ করে খুঁজে পাওয়া গেছে শিশুর উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর জাঙ্ক খাবার প্রীতির সম্ভাব্য কারণঃ বিজ্ঞাপন। স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানো শিশুরা বিজ্ঞাপনও বেশি দেখে। শিশুদের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বানানো হয় শত শত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন যা শিশুদের ওইসব খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে।
স্ক্রিন দেখা ও ভিডিও গেইম খেলার সময় শিশু-কিশোররা যে খাবারটুকু খায়, সেটা তার শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয়। অন্যদিকে শিশুর খিধে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সময়মত সুষম খাদ্য থেকে শিশু বঞ্চিত হয়। সাথে আছে শিশুদের সেডেনটারি অভ্যাস। বদ খাদ্যাভাস ও স্থূলতা শিশুকে ঠেলে দেয় জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে।
