আপনার ২০২০ সালের রেজোলিউশন কি এরকম কিছু?- ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠা- নতুন সেমিস্টারে জীবনের সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করা- প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা করে পড়াশুনা করা- বাবা-মা/স্বামি-স্ত্রী বা সন্তানদের সাথে আরো বেশি সময় কাটানো- চা/সিগারেট/কফি/মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দেয়া- রাতে দেরি করে বাড়ি না ফেরা- প্রতি মাসে একটা করে নতুন বই পড়া- প্রমোশন- টপ ইউনিভারসিটিতে এডমিশন নেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি!
আর মাত্র ৫ দিন বাকি নতুন বছরের, নতুন দশকের। আমি ২০২০ এ আমার কাজ-দায়িত্ব-লক্ষ্য এসব নিয়ে ভাবছি। আমরা অনেকেই ভাবি। নতুন বছর, তা জন্মদিন হোক, কিংবা ইংরেজি বা বাংলা সনের শুরু; আমরা অনেকেই এই নতুনকে ঘিরে নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনতে চাই। পরিবর্তন আসলে বেশির ভাগ সময়ই আসে না। কারণ হিসেবে বলতে পারিঃ
১) জীবনের লক্ষ্য না থাকা। জীবনের লক্ষ্য না থাকলে একটি নতুন বছরেরও বিশেষ কোন লক্ষ্য থাকে না। আর সুস্পষ্ট টার্গেট না থাকায় এই resolution গুলো ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট মোটিভেশন থাকে না।
২) উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আপনি আজীবন নিশাচর মানুষ হলে, ‘কাল থেকে আগে আগে বিছানায় যাবো আর সকাল সকাল উঠব’ ভাবলেই রাত এগারোটায় ঘুমিয়ে পরতে পারবেন না।
৩) অর্জনকে মূল্যায়ন না করা। আপনি পাঁচটায় উঠে দিন শুরু করতে পারেননি, নিজের উপর বিরক্ত হলেন, হাল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আগে যে আপনি সাতটায় উঠতেন, আজ পৌনে সাতটায় উঠেছেন, এই সাফল্যটাকে উপভোগ করলেন না।
৪) দ্রুত হাল ছেড়ে দেয়া। একদিন দু’দিন এ’সপ্তা ও’সপ্তা করে পুরো জানুয়ারিটাই পার হয়ে গেলো। ২০২০ পুরনো হয়ে গেলো, বিস্মৃত হলেন প্রতিজ্ঞাগুলো। যারা আদতেই নতুন বছরে নতুন কিছু শুরু বা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য আছে আমার কিছু টিপস।
আমি এবছর এই উপায়গুলো ফলো করব। নাম দিয়েছি 10% rule. যা কিছুই আমি করতে চাই নতুন বছরে, আমি যদি তার দশ ভাগও করতে পারি, তাতেই আমি খুশি। আপনিও যা করতে পারেনঃ
১) আপনার লক্ষ্যগুলো (প্রজেক্ট) অর্জন করতে যা কিছু করতে হবে, সেগুলোর তালিকা করুন।
এইমগুলোকে কাগজে বা বোর্ডে লিখে টাইমলাইনে সাজান। প্রতিটি প্রোজেক্টেই প্রতি মাসের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য (aim) রাখুন। একাধিক প্রজেক্ট এবং প্রজেক্টের এইমগুলোর কাজ আপনি পাশাপাশিি করতে পারেন। এতে একটির জন্য আরেকটি আটকে থাকবে না। প্রতিটি কাজের অন্তত দশ ভাগ করতেই হবে বলে ধরে রাখুন। আমার নতুন বছরে গবেষনার বাইরের প্রোজেক্টগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ সময় বের করে আত্মীয় ও পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা (এইমঃ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একজনকে ফোন করা), ফরাসি ভাষার চর্চা (এইমঃ প্রতিদিন অফিস যাওয়া-আসার সময় ট্রেনে এক ঘন্টা সময় ভাষা চর্চায় দেয়া), আগষ্টের মাঝে দ্বিতীয় বইয়ের কাজ শেষ করা (এইমঃ প্রতি সপ্তাহে এক-দুই বেলা লেখালেখি করা), এক্সারসাইজ (এইমঃ সপ্তাহে অন্তত তিনদিন জিমে যাওয়া), মেডিটেশন (এইমঃ সপ্তাহে অন্তত তিনদিন) ইত্যাদি।
২) অল্প করে এগোতে থাকুন।
গতি ধীর হতে পারে, কিন্তু থামবেন না। এমন কোন টাইমলাইন করবেন না, যেটা আপনি নিশ্চিতভাবেই ভাঙবেন। দশ ভাগ ফ্লেক্সিবিলিটি রাখুন। আপনি হয়ত আপনার বসকে ইম্প্রেস করতে চাইছেন, তার সাথে ভালো সম্পর্ক করতে চাইছেন। আপনার চেষ্ঠায় কন্সিস্টেন্ট থাকুন, জোঁকের মত লেগে থাকুন।
৩) নিজেকেই নিজে প্রলুব্ধ ও পুরস্কৃত ক্রুন। যা কিছু অর্জন করতে পারবেন (অন্তত দশ ভাগ), তার জন্য আনন্দিত হোন এবং আপনার কাছের মানুষদের সেই অর্জনের কথা জানান। এতে আপনি একজন পজিটিভ মানুষ হিসেবে পরিচিত হবেন।
৪) প্রায়োরিটি ঠিক করুন। যে কাজগুলো আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক নয়, সেগুলোকে বিনীতভাব ‘না’ বলুন। আপনি যদি নতুন বছরে সন্তানকে বেশি সময় দিতে চান, তবে বাইরের ছোট-খাটো আড্ডাবাজিকে না বলুন। আবার যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় যে এখন থেকে আপনি আগের চেয়ে বেশি নেটওয়ার্কিং করবেন, তবে কখন-কিভাবে-কাদের সাথে কিভাবে ইন্টারেকশন করবেন, এ ভাবনাগুলোকে অগ্রাধিকার দিন।
৫) আপনার একজন পার্টনার-ইন-ক্রাইম (!) রাখবেন। এইমগুলোকে একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করুন। পার্টনারের আপনার মত একই ধরনের লক্ষ্য থাকলে ভালো হয়। যেমন দুজনই সিগারেট ছাড়তে চাইছেন, কিংবা দুজনই দেশের বাইরে পড়তে যাবেন এবং জিআরই তে ভালো স্কোর করতে চান। অন্তত দশ ভাগ সময় একে অন্যকে সাপোর্ট করার জন্য দিন।
অল্প অল্প করে করলেই যদি দিনশেষে বেশি করা যায়, তবে সকালেই পিঠে বাড়তি বোঝা বওয়া কেন?
প্রথম প্রকাশঃ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
